থাইল্যান্ডে পেটের ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ

পেটের ক্যান্সার, যা গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার নামেও পরিচিত, বিশ্বব্যাপী পঞ্চম সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আস্তরণে ক্যান্সার ও ম্যালিগন্যান্ট কোষের বৃদ্ধির ফলে এই রোগ হয়।

পেটের ক্যান্সার রাতারাতি বৃদ্ধি পায় না কারণ এই রোগটি সাধারণত অনেক বছর ধরে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। কিছু প্রাক-ক্যান্সারজনিত পরিবর্তন সত্যিকারের ক্যান্সারের বিকাশের আগে ঘটে। কিন্তু এই প্রাথমিক পরিবর্তনের ফলে খুব কমই কোনো উপসর্গ দেখা দেয় এবং তাই, প্রায়শই প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা যায় না যখন এটি চিকিত্সা করা সবচেয়ে সহজ।

গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার পাকস্থলীর প্রাচীরের মাধ্যমে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং নিকটবর্তী অঙ্গগুলিতে আক্রমণ করতে পারে। এটি সহজেই লিম্ফ জাহাজ এবং লিম্ফ নোডগুলিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। একটি উন্নত পর্যায়ে, এটি রক্ত ​​​​প্রবাহের মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পারে এবং লিভার, ফুসফুস এবং হাড়ের মতো অঙ্গগুলিতে ছড়িয়ে বা মেটাস্টেসাইজ করতে পারে। সাধারণত, পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা হয় ইতিমধ্যেই মেটাস্ট্যাসিস অনুভব করেছেন বা শেষ পর্যন্ত এটি বিকাশ করেছেন।

পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রকারভেদ

পেটের ক্যান্সারকে পেটের অন্যান্য ক্যান্সার বা খাদ্যনালী ক্যান্সারের সাথে বিভ্রান্ত করা উচিত নয়। পেটের ক্যান্সার সহ অন্যান্য কিছু ক্যান্সারও হতে পারে বড় এবং ছোট অন্ত্র, লিভার বা অগ্ন্যাশয় এই ক্যান্সারের বিভিন্ন উপসর্গ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিকিৎসার বিকল্প থাকতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের কিছু সাধারণ প্রকারের মধ্যে রয়েছে:

• Adenocarcinoma: এটি পাকস্থলীর ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ রূপ এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রায় 90 থেকে 95 শতাংশ হল এই ধরনের ক্যান্সার পাকস্থলীর সবচেয়ে ভিতরের আস্তরণ (মিউকোসা) গঠনকারী কোষ থেকে বিকাশ লাভ করে।
• লিম্ফোমা: এটি পাকস্থলীর ক্যান্সারের একটি বিরল রূপ এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের মাত্র চার শতাংশ লিম্ফোমা। এগুলি ইমিউন সিস্টেম টিস্যুর ক্যান্সার, কখনও কখনও পেটের দেয়ালে পাওয়া যায়।
• গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল স্ট্রোমাল টিউমার (জিআইএসটি): এটি একটি বিরল ধরনের টিউমার যা পাকস্থলীর প্রাচীরের কোষের খুব প্রাথমিক আকারে শুরু হয় যাকে বলা হয় কাজল এর ইন্টারস্টিশিয়াল সেল। জিআইএসটিগুলি পরিপাকতন্ত্রের যে কোনও জায়গায় পাওয়া যেতে পারে।
• কার্সিনয়েড টিউমার: এটি পাকস্থলীর ক্যান্সারের একটি বিরল রূপ এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রায় তিন শতাংশ কার্সিনয়েড টিউমার। কার্সিনয়েড টিউমারগুলি পেটের কোষগুলিতে শুরু হয় যা হরমোন তৈরি করে।

অন্যান্য কিছু ধরনের পাকস্থলীর ক্যান্সারের মধ্যে রয়েছে স্কোয়ামাস এবং ছোট কোষের কার্সিনোমা এবং লিওমায়োসারকোমা। এই ধরনের ক্যান্সার খুবই বিরল।

পেটের ক্যান্সারের কারণ

পাকস্থলীর ক্যান্সারের পেছনে কোনো একক, নির্দিষ্ট কারণ নেই। যাইহোক, বেশ কয়েকটি পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে যা সম্ভাব্যভাবে পেটে টিউমার তৈরি করতে পারে। এই পেটের ক্যান্সারের কিছু কারণ বা ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

• অন্ত্রের প্রদাহকে গ্যাস্ট্রাইটিস বলে
• নামক সাধারণ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি
• দীর্ঘস্থায়ী রক্তাল্পতা
• পাকস্থলীর বৃদ্ধিকে পলিপ বলে
• ধূমপান
• স্থূলতা
• ধূমপান করা, আচারযুক্ত বা নোনতা খাবারের অত্যধিক ব্যবহার
• এ-টাইপ রক্তের গ্রুপ
• অ্যাপস্টাইন-বার ভাইরাস সংক্রমণ
• নির্দিষ্ট জিন (রোগের পারিবারিক ইতিহাস)

পেট ক্যান্সারের লক্ষণ

পেটের ক্যান্সারের প্রথম দিকে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যাইহোক, অন্য কিছু অন্তর্নিহিত অবস্থার কারণেও পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণ থাকতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, প্রাথমিক পর্যায়ে পাকস্থলীর ক্যান্সার নির্ণয় করা কঠিন হওয়ার এটাই প্রধান কারণ।

পেটের ক্যান্সারের প্রথম দিকের কিছু লক্ষণ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:

• অম্বল
• নিয়মিত বদহজম
• হালকা বমি বমি ভাব
• ক্ষুধামান্দ্য
• ঘন ঘন burping
• ফুলে যাওয়া বোধ

কিন্তু খাবারের পর শুধু বদহজম বা বুকজ্বালা অনুভব করার মানে এই নয় যে আপনার ক্যান্সার হয়েছে। যদিও, আপনি যদি এই উপসর্গগুলি অনেক বেশি অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন, যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে আরও পরীক্ষা করা হবে কি না।

উন্নত গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার বাড়ার সাথে সাথে আপনি নিম্নলিখিত সহ পেট ক্যান্সারের আরও গুরুতর লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারেন:

• ঘন ঘন পেট ব্যথা বা স্টারনামে ব্যথা
• ঘন ঘন বুকজ্বালা
• রক্ত ধারণকারী বমি
• ডিসফ্যাগিয়া (গিলতে অসুবিধা)
• ক্ষুধা হ্রাস, হঠাৎ ওজন হ্রাস দ্বারা অনুষঙ্গী
• মলগুলিতে রক্ত
• অত্যধিক ক্লান্তি
• হলুদ চোখ বা ত্বক

পেট ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অনেক বিকল্প আছে। আপনার ক্যান্সারের পর্যায়ের উপর নির্ভর করে আপনার বিশেষজ্ঞ আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিত্সা পরিকল্পনা বেছে নেবেন।

প্রায়শই, টিউমার অপসারণের জন্য নিম্নলিখিত পেট ক্যান্সারের চিকিত্সার বিকল্পগুলির সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়:

• সার্জারি: পেটের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এটি সবচেয়ে সাধারণ এবং পছন্দের বিকল্প। আপনার সার্জন পাকস্থলীর ক্যান্সারের পাশাপাশি সুস্থ টিস্যুর মার্জিন দূর করতে পারে। সার্জারি টিউমারকে অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের কোষগুলি যাতে পিছনে না থাকে তা নিশ্চিত করে আপনার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করে। যদি ক্যান্সার আরও উন্নত পর্যায়ে থাকে, তবে এটি সম্পূর্ণ পেট অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে। বেশিরভাগ সার্জারি একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পরিচালিত হয় যা এন্ডোস্কোপ নামে পরিচিত। দূরবর্তী এবং প্রক্সিমাল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সাবটোটাল গ্যাস্ট্রেক্টমি এবং প্রক্সিমাল গ্যাস্ট্রেক্টমি করা হয়।
• কেমোথেরাপি: এটি কিছু সাইটোটক্সিক ওষুধ এবং ওষুধের ব্যবহার জড়িত যা ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে বা তাদের বৃদ্ধি হওয়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। এটি বড়ি হিসাবে বা ক্লিনিকে IV এর মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে। কেমোথেরাপি সাধারণত কয়েক সপ্তাহ সময় নেয় এবং এটি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কিন্তু এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করে ভর্তুকি দেওয়া যেতে পারে।
• বিকিরণ থেরাপির: এই চিকিত্সায়, উচ্চ-শক্তি রশ্মি ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য ব্যবহার করা হয়। পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য রেডিওথেরাপি সাধারণত সুপারিশ করা হয় না কারণ আশেপাশের অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যাইহোক, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের উন্নত ক্ষেত্রে, রেডিওথেরাপি একটি বিকল্প।
• লক্ষ্যযুক্ত ওষুধ: কিছু নতুন ধরনের ওষুধ ক্যান্সার কোষের সাথে লড়াই করতে পারে এবং কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশনের তুলনায় কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যা ক্যান্সারের সাথে সুস্থ কোষকে হত্যা করার প্রবণতা রাখে।

স্টেজ 0 পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা: এটি বেশিরভাগই এন্ডোস্কোপিক সার্জারির সাহায্যে চিকিত্সা করা হয়।

স্টেজ 1 পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা: এটি বেশিরভাগই এন্ডোস্কোপিক সার্জারির সাহায্যে চিকিত্সা করা হয়, কেমোথেরাপির কয়েকটি সেশনের মাধ্যমে অনুসরণ করা হয়। কখনও কখনও, সার্জন আপনাকে অস্ত্রোপচারের আগে কেমোথেরাপির কয়েকটি সেশন সহ্য করার পরামর্শ দিতে পারে।

স্টেজ 2 পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা: কেমোথেরাপির পরে সার্জারি হল প্রধান চিকিত্সার বিকল্প। আপনি যদি অস্ত্রোপচারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেন, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির সংমিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্টেজ 3 পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা: অস্ত্রোপচারের আগে কেমোথেরাপির কয়েকটি চক্র পরিচালিত হয়, পরে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পরে, কেমোথেরাপির কয়েকটি চক্র পুনরাবৃত্তি হয়, তারপরে বিকিরণ থেরাপি।

স্টেজ 4 পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা: কেমোথেরাপি এই ধরনের রোগীদের জন্য প্রধান চিকিত্সা বিকল্প। উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করতে একটি অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। উপসর্গ উপশম করার জন্য প্রয়োজন হলে রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে।

পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসার পর পুনরুদ্ধার হতে অনেক সময় লাগতে পারে। চরম ব্যথার মতো অস্বস্তিকর উপসর্গগুলি পরিচালনা করতে আপনার বিশেষ উপশমকারী যত্নের প্রয়োজন হতে পারে। ডাক্তার, বন্ধুবান্ধব, নার্স এবং পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ক্রমাগত সহায়তায়, স্বাস্থ্য অবশেষে ভাল বোধ করে এবং আপনি একটি উন্নত মানের জীবন অনুভব করতে সক্ষম হন।

অস্ত্রোপচারের পরপরই আপনি সঠিকভাবে বা নিজের দ্বারা খেতে সক্ষম নাও হতে পারেন। যাইহোক, আপনি কয়েক দিনের মধ্যে আপনার স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসতে পারবেন। অস্ত্রোপচারের পরে নিয়মিত কেমোথেরাপি পরিদর্শন পরিকল্পনা এবং পরিচালনা করা কঠিন হতে পারে।

কেমোথেরাপির পরে আপনার সম্মুখীন হতে পারে এমন নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন। ডাক্তার আপনাকে নির্দিষ্ট ওষুধ দেবেন যা নির্দিষ্ট উপসর্গ যেমন বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, বমি, জয়েন্টে ব্যথা এবং মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।